রিপোর্ট: আমিনুর রহমান জিলু
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী—এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট, চার কোটি তিরাশি লাখ তেইশ হাজার একশ’ চুয়াল্লিশ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হলে নির্ধারিত সময় পার হলেও এখনো অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়নি। কাজের মধ্যে রয়েছে পাঁচতলা একাডেমিক ভবন, স্যানিটারি, পানি সরবরাহ এবং অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজ। কাজটি বাস্তবায়ন করছে সিলেটের আম্বরখানার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কেবি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রাকিব এন্টারপ্রাইজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, মরিচা ধরা রড, অপরিষ্কার ও গাছের পাতা-ময়লা মিশ্রিত বালু এবং নিম্নমানের পাথর ও সিমেন্ট। এছাড়া, ইট ও পাথর না ধুয়েই ঢালাইকাজ করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক কমিটির সভাপতি মো. সানোয়ার হাসান সুনু বলেন, “বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত ভবনের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। কিউরিং নিয়ম অনুসারে হচ্ছে না, ছাদ ঢালাইকাজের পরেও সঠিকভাবে পানি দেওয়া হচ্ছে না। পিলারে চটের বস্তা দিয়ে পানি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, নির্মাণে গুণগত মান বজায় রেখে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
নাগরিক অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এম এ কাদির বলেন, “এত বড় প্রকল্পে নজরদারির অভাব ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার উদ্বেগজনক।”
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইকবাল মাসুদ বলেন, “আমরা কাজের তদারকি করছি। তবে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো প্রকৌশলীরাই ভালো বুঝেন। আমরা চাই, কাজটি যেন মানসম্মত সামগ্রী দিয়ে সম্পন্ন হয়।”
নির্মাণকাজের দেখভালে নিয়োজিত ঠিকাদার আব্দুল রাকিবের কেয়ার টেকার মো. তানজিল সিদ্দিকী জানান, “আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না।”
ঠিকাদার আব্দুল রাকিব বলেন, “কোনো অনিয়ম করছি না। শিডিউল অনুযায়ী কাজ করছি। তবে শ্রমিকদের ভুল থাকতে পারে। ইচ্ছাকৃতভাবে অনিয়ম করি না।”
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসফাক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “কিউরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়ম হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।”
স্থানীয়দের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে যেন প্রকল্পটি প্রাক্কলন অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
আপনার মতামত লিখুন :