

স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের দীঘলবাগ নোয়াগাও গ্রামের মিনহাজ মিয়ার এবং তার ছোট চাচা আক্তার হোসেন এর সাথে প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে জাহের মিয়ার দীর্ঘদিন ধরে বাড়ী ঘর সহায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সেই সূত্র ধরে একই বাড়িতে পৃথকভাবে বসবাসকারী দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ অগ্নিসংযোগ ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মিনহাজ মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন—গতকাল ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি তারিখে, রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ও তার পরিবার ঘরের ভিতরে থাকা অবস্থায় হঠাৎ রান্নাঘরে আগুন দেখতে পান। বাড়ির উঠানের ফ্লাশ লাইটের আলোতে তিনি দেখতে পান
—বিবাদী জাহের মিয়া ও মাহিদ মিয়া রান্নাঘরের বেড়া ও কাঠের মধ্যে প্রেট্রোল ছিটিয়ে দিয়াশলাইতে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনার পর তারা দ্রুত সেখান থেকে সরে যান।
পরে ভুক্তভোগীদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে রান্নাঘরের বেড়া, লাকড়ি, চালসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তাহমিনা আক্তার অভিযোগে আরও বলেন—আগুন লাগানোর কথা জানাজানি হওয়ার পর বিবাদী জাহের মিয়াসহ ছয়জন লাঠিসোটা নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে এসে ভুক্তভোগীদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এতে প্রতিবাদ করলে ভুক্তভোগীর ছেলে জামিল আহমদকে লক্ষ্য করে সুপারি গাছের শলা দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে তার বাম হাতের তালুতে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে অন্য বিবাদীরা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে।
তাহমিনা আক্তার আরো জানান—তিনি নিজে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাধা দিতে গেলে তারাও মারধরের শিকার হন। পরে স্থানীয়রা তাদের সহায়তায় এগিয়ে এলে বিবাদীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর আহত জামিলকে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালেও কোনো সমাধান না পেয়ে ভুক্তভোগী জগন্নাথপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- ভুক্তভোগী পরিবারের রান্না ঘরের কিছু অংশ এবং আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী আক্তার হোসেন সেলু মিয়া জানান- ৪০ বছর তিনি সৌদি আরবে ছিলেন- প্রতিপক্ষের লোকজন তার ভাইয়ের ছেলে এবং মেয়ে- লালন পালন করে তিনিই তাদের বড় করেছেন এবং বিয়ে শাদিও দিয়েছেন, বিদেশেও পাঠিয়েছেন। একবার তারা আমার পরিবারকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলো গ্রামের মানুষ তাদের মুক্ত করেছে। প্রতিপক্ষ কাউকে তোয়াক্কা করেনা। তারা বিচার মানেনা সালিশ মানেনা। বর্তমানে আমি দেশে আছি। আমার দুইটা মেয়ে আছে তারা প্রতিপক্ষের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারেনা। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
ভুক্তভোগী মিনহাজ মিয়া ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বলেন- তাদের ছেলে মেয়ে প্রতিপক্ষের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেনা। সামনে তাদের পরীক্ষা, ভয়ে আর আতঙ্কে তারা রাত দিন পার করছেন। এমতাবস্থায় তারা স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে জাহের মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি বাড়িতে না থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে এবং অভিযুক্ত জাহের মিয়ার মোবাইল নাম্বার দিতে অস্বীকৃতি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সিতু মিয়া বলেন- আগুন লাগার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি এবং গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ মিলে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন বলেও তিনি জানান। তবে কেবা কারা আগুন দিয়েছে তিনি সেটা জানেন না।
সালিসি ব্যাক্তিত্ব – মোঃ কয়ছর খান এবং মোঃ রুনু মিয়া রুকনু সাংবাদিকদের বলেন- চার থানার লোক মিলে দুই তিন বার আমার বাড়ীতে সালিসি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আক্তার হোসেন সেলুর নামে রায় হয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন সেই রায় না মানায় বিরোধটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শওকত হোসেন বলেন- খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি স্থানীয়রা আমি আসার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন। পরিস্থিতি যাতে উত্তপ্ত না হয় এজন্য আমি দুই পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছি।
জগন্নাথপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুইয়া বলেন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :